Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

জেলা প্রশাসকের বার্তা


সম্মানিত চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসী,

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আপনাদের সকলকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন হলো বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি একটি জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত সর্বোপরি একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ-এর স্বাধীনতা অর্জনের আজ পঞ্চাশ বছর । ত্যাগ, গর্ব আর আনন্দের কাঙ্ক্ষিত সুবর্ণ জয়ন্তী। একই সঙ্গে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী। আজকের এই দিনটি আমাদের জন্য সত্যিই অত্যন্ত গর্বের এবং আনন্দের।

 

ইতিহাসের এই মাহেন্দ্রক্ষণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাসীর প্রতি জানাচ্ছি আমার প্রাণঢালা শুভেচ্ছাও অভিনন্দন। পরম শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীরমুক্তি যোদ্ধাগণসহ যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা ও জীবিত বীরমুক্তিযোদ্ধাগণকে, ১৫ আগস্টের কালরাতে স্বাধীন বাংলাদেশের শত্রুর নির্মম বুলেটের আঘাতে শহিদ হওয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারবর্গকে এবং ৩ নভেম্বর ঢাকার কারাগারে নির্মম হত্যার শিকার শহিদ  জাতীয় চার নেতাকে, এই জেলার মাটিতে শায়িত বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর নাজমুল হকসহ শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাগণকে।

 

আপনারা অবগত আছেন, অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতিতে এগিয়ে চলেছি আমরা উন্নত বিশ্বের কাতারে আমাদের নাম লেখাতে। আমাদের টার্গেট এখন ২০৪১-এর মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ। কোভিড ১৯ এর সংক্রমণের কারণে সমগ্র বিশ্বের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হলেও বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও প্রজ্ঞাপূর্ণ নেতৃত্বে পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, অত্যাধুনিক হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর, এলএনজি টার্মিনাল, কর্ণফুলী টানেলসহ বিশাল বিশাল উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা সফলভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে, ইতোমধ্যে সারা বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতের আলো শোভা পাচ্ছে। যা স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত বাঙালির কর্মপ্রচেষ্টার উজ্জ্বল বহিঃপ্রকাশ। বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারায় সাবেক গৌড়ের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ও ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের অন্যতম স্থলবন্দর সোনামসজিদকে আধুনিকায়ন করার কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নকরা হয়েছে। বিল ভাতিয়াকে ঘিরে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে আধুনিক এগ্রোবেজড ইকোনোমিক জোন প্রতিষ্ঠার, যা এই অঞ্চলের কৃষি ও শিল্পে বিপ্লব ঘটাতে সাহায্য করবে।  মহানন্দা নদীর উপর রাবার ড্যাম নির্মিত হচ্ছে, মহানন্দা নদীর উপর নির্মাণ করা হয়েছে শেখ হাসিনা সেতু। আধুনিক সদর হাসপাতালটি ২৫০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত হয়েছে। রেলপথে যোগাযোগের উন্নয়ন হিসেবে সারাদেশের সাথে আন্তঃনগর ট্রেন যোগাযোগ চালু হয়েছে। এ জেলায় নান্দনিক পাসপোর্ট ভবন, যুব উন্নয়ন ভবন, বাফার গুদাম ইত্যাদি নির্মাণ করা হয়েছে। ৬টি মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজ সমাপ্তির পথে। নির্মাণ করা হয়েছে আধুনিক মানের ম্যাংগো মার্কেট। আমের রাজধানীতে আপনাদের উৎপাদিত খিরসাপাত দেশের তৃতীয় জিআই পণ্য হিসেবে আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেছে। এই জেলায় সর্বমোট ৫৬৭৯৫ জনকে বয়স্ক ভাতা, ২১৬৫৭ জনকে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা, ২৫১৭০ জনকে প্রতিবন্ধি ভাতা, ৭৮৮৯ জনকে মাতৃত্বকালীন ভাতা, ৯২০৬ জনকে চল্লিশ দিনের কর্মসূচীর আওতায় সহয়তা দেওয়া হচ্ছে। গৃহহীনদের জন্য ১৩৮৯ টি জমিসহ ঘর প্রদান করা হয়েছে, ১৪৭৮ টি ঘর নির্মাণ চলছে। এই জেলার প্রতিটি গৃহহীনদের জন্য এবছরেই গৃহ নির্মাণ করে দেয়া হবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার হারানো সংস্কৃতি, লোকগীতি, গম্ভীরা, আলকাপ, ঝান্ডি, খেলাধূলা ইত্যাদিকে জীবিত করার জন্য ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

 

পদ্মা, মহানন্দা, পুনর্ভবা ও পাগলা বিধৌত এবং  ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির লীলাভূমি, আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা। রেশম শিল্পের সূতীকাগার, কাঁসা শিল্প, দৃষ্টিনন্দন নকশি কাঁথা বাংলাদেশের দৃষ্টি নন্দন পুরাকীর্তি ছোট সোনামসজিদ, তাহখানা, প্রকৃতির লীলা ভূমি বাবুডাইং, চাঁপাইনবাবগঞ্জ কে করেছে সারা দেশে অনন্য। তবে সীমান্তবর্তী এই জেলার জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে মাদকাসক্তি, মাদক চোরাচালান, বাল্যবিবাহ ও জংগীবাদ। আমাদের উন্নয়ন অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্তকারী এই সমস্যাগুলি প্রতিরোধে চাই আপনাদের সকলের সহযোগিতা। সবাই মিলে এই সব সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হতে পারবে বাংলাদেশের একটি মডেল জেলা।

 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নত বিশ্বের যাত্রায় আপনার মূল্যবান অংশগ্রহণ একান্ত ভাবেকাম্য। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ হবে আমাদের সন্তানদের জন্য এক আদর্শ ভূমি। যে কোন অপশক্তির চক্রান্ত রুখে দেশের প্রতিটি অগ্রগতিতে আমরা থাকব যুথবদ্ধ হয়ে। সোনার বাংলাদেশে গর্বিত বাঙালি হিসেবে ২০৪১ এর বিজয় রথে আসুন কাজ করি পরম দৃঢ়তায়; এগিয়ে চলি বিজয়ের চেতনায়। নিদারুণ বেদনা, অসীম সাহসী প্রতিরোধ আর পরম মমতায় রচিত আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের বিজয়, প্রিয় লাল-সবুজের পতাকা।

 

এ কে এম গালিভ খাঁন

জেলা প্রশাসক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ