Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

আলহাজ ডা: আ. আ. ম. মেসবাহুল হক (বাচ্চু ডাক্তার)

(১৯৩০-২০০৯ খ্রি.)

 

সমাজে এমন কিছু মানুষ আছেন যারা দেশ ও জাতির কল্যাণে আজীবন কাজ করে গেছেন, কাজ করে গেছেন নিজের সর্বস্ব উজাড় করে। এমনই একজন মানুষ আলহাজ্ব ডা. আ. আ. ম. মেসবাহুল হক (বাচ্চু ডাক্তার)। চাপাইনবাবগঞ্জের এই কৃতিসন্তান একজন সফল চিকিৎসক,রাজনীতিবিদ, সমাজসেবক, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ভাষাসৈনিক ছিলেন।

 

জন্মপরিচয়ঃ আলহাজ্ব ডা. আ. আ. ম. মেসবাহুল হক রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে ১৯৩০ সালের ৩ মার্চ এক সম্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পেশায় তিনি একজন চিকিৎসক। তাঁর পিতার নাম হাজী মোঃ মুনিরউদ্দিন এবং মাতার নাম গোল আরজান নেশা।

 

শিক্ষাজীবনঃ ডা. আ. আ. ম. মেসবাহুল হক ১৯৪৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। তিনি ১৯৪৯ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে আইএAসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তঙ্কালীন রাজশাহী মেডিক্যাল স্কুল (বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ) থেকে ১৯৫২ সালে এলএমএফ ডিগ্রী অর্জন করেন।

 

সংসার জীবনঃ ডা. আ. আ. ম. মেসবাহুল হক ১৯৬১ সালের ২১ মার্চ মাসুদা হকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে মোট ৫ সন্তানের জনক। তার মেয়ে ফেরদৌসি ইসলাম জেসি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহিলা আসন-৩৩৮ থেকে এবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

 

রাজনৈতিক জীবনঃ বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা ডা. আ. আ. ম. মেসবাহুল। হক (বাচ্চু ডাক্তার) ১৯৭০ প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ডা. আ. আ. ম. মেসবাহুল হক বিভিন্ন মেয়াদে ১৩ বছর প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে (১৯৭১-১৯৭২) গণপরিষদের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গভর্ণর নিযুক্ত করেন। আ. আ. ম. মেসবাহুল হক (বাচ্চু ডাক্তার) বিভিন্ন মেয়াদে ১৩ বছর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সফলতার সাথে দলকে নেতৃত্ব দেন। তিনি এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের জন্য কারাবরণ করেন।

 

ভাষা আন্দোলনঃ  ছাত্রাবস্থায় আ, আ, ম, মেসবাহুল হক (বাচ্চ ডাক্তার) তৎকালীন রাজশাহী মেডিক্যাল স্কুলের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। রাজশাহী কলেজের ছাত্র থাকাবস্থায় মেসবাহুল হক সহ অন্যান্য ছাত্ররা ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানকে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য আর লিপি প্রদান করেন। সে সময় প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানকে ডিপুটেশন পদানের কথিত অপরাধে মেহবাহুল হকসহ ১৬জন ছাত্রকে কলেজ কর্তৃপক্ষ রাজশাহী কলেজ থেকে বহিস্কার করুন। এছাড়াও ভাষা আন্দোলনের সাথে জড়িত থাকায় কথিত অপরাধে ১৯৫৪ সালে রাজশাহীতে ৪০জন ছাত্রনেতার সাথে সেই সময়কার দাপটে ছাত্রনেতা ডা. আ.আ. ম. মেসবাহুল হক (বাচ্চু ডাক্তার)ও কারাবরণ করেন।

 

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধঃ  ডা. আ.আ. ম. মেসবাহুল হক (বাচ্চু ডাক্তার) চাঁপাইনবাবগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দান করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য চাপাইনবাবগঞ্জে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়। যার অন্যতম সদস্য ছিলেন ডা. আ.আ. ম. মেসবাহুল হক (বাচ্চু ডাক্তার)। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য ১৯৭১ সালে মালদহে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানকার জোনাল অফিসের সহকারী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ডা. আ.আ. ম. মেসবাহুল হক (বাচ্চু ডাক্তার)। তিনি সেখানে গৌড় বাগান প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ইনচার্জ ছিলেন।

 

সম্মাননাঃ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠার গৌরবময় অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ তাকে আজীবন সম্মাননা পদক প্রদান করেন। ২০১১ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নবনির্মিত স্টেডিয়ামটি ডা ডা. আ.আ. ম. মেসবাহুল হক (বাচ্চু ডাক্তার) স্টেডিয়াম নামে নামকরণ করা হয়।

 

সমাজসেবায় অবদানঃ ডা. আ. আ. ম. মেসবাহুল হক (বাচ্চু ডাক্তার) চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেডক্রিসেন্ট সমিতি, ডায়াবেটিক সমিতি, হার্ট ফাউন্ডেশন, অন্ধকল্যাণ সমিতি, রোগী কল্যান সমিতি, সরকারি হরিমাহোন স্কুল প্রাক্তন ছাত্র সমিতি, পদ্মানদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ কমিটি, চিকিৎসক পরিষদ প্রতিষ্ঠা এবং পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ, নবাবগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ, নবাব শিশু শিক্ষা নিকেতন, নবাবগঞ্জ জেলা স্কুল, বালিয়াডাঙ্গা সিনিয়র মাদ্রাসা নবাবগঞ্জ কামিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বিভিন্ন মেয়াদে এসব প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদক, সহ-সভাপতি, সভাপতি এবং কার্যকরী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মরহুম বাচ্চু ডাক্তার ৬০ এর দশকে নবাবগঞ্জ মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন ছাড়াও মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত নির্বাচিত সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তিনি নির্বাচিত সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য হিসেবে জেলা ক্রীড়া সংস্থা পরিচালনার সাথে যুক্ত ছিলেন।